ডেইলি ক্রাইম বার্তা ডেস্ক : তিন মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের জননী বিনতী ত্রিপুরা (৩৯) আর এই ঘটনা খাগড়াছড়ির। বছর চারেক আগে রোগাক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বিনতী ত্রিপুরা’র স্বামী গোপাল ত্রিপুরা। সেই থেকে শুরু তাঁর দুর্বিষহ জীবন সংগ্রাম।
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের দূর্গম ওয়াক্রাক পাড়া এলাকায় সরকারি খাস ভূমিতে ভাঙাচোরা একটি ঘরে দুই মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান নিয়ে থাকেন বিনতী। চার সন্তানের মধ্যে বড় মেয়েকে বিয়ে দেয়ায় সে থাকে স্বামীর বাড়িতে। অর্থাভাবে পড়াশুনা করাতে পারেন না বাকী তিন ছেলে-মেয়েদের। সারাদিন গহীন অরণ্যে লতা-পাতা কিংবা শাক-সবজি কুড়িয়ে এনে বিক্রি করে সামান্য যা টাকা পান তাতেই কোনরকমে সন্তানদের নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন অতিবাহিত করেন এই নারী। বিধবা এবং দুঃস্থ হলেও পান না কোন সরকারি ভাতা।
তবে চার বছর পর হলেও বিনতী’র এই দুঃখভরা দুঃসহ সংগ্রামের ভার অনেকটাই হালকা করলেন খাগড়াছড়ি’র মানবিক জেলা প্রশাসক জনাব, প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিনতী ত্রিপুরা’র সংবাদ দেখে নিজেই ছুটে গেলেন তাঁর বাড়ি। বুধবার বিকেলে বিনতীর ভাঙাচোরা ঘরখানা পরিদর্শনে গিয়ে জেলা প্রশাসক জনাব, প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস ঘোষণা দিলেন, ভূমিসহ সরকারি একটি সেমিপাঁকা ঘর পাচ্ছেন বিধবা বিনতী। এসময় বিনতী ত্রিপুরাকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ দশ হাজার টাকার অর্থ সহায়তাও দিয়েছেন। পাশাপাশি বিনতী ত্রিপুরা যেনো আগামীতে বিধবা ভাতা পান সে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন এবং সরকারি খরচে তাঁর এক সন্তানের পড়াশুনার দায়িত্ব নেবেন বলেও জানিয়েছেন অনন্য এই জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসক জনাব, প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, বিনতী ত্রিপুরার সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার দৃষ্টিগোচর হয়। পরিদর্শনে এসে বিনতী ত্রিপুরা’র কষ্ট প্রত্যক্ষ করলাম। আগামী দুয়েক দিনের মধ্যে বিনতী ত্রিপুরার জন্য নতুন ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।
এদিকে ভূমিসহ ঘর, নগদ অর্থ সহায়তা, বিধবা ভাতা এবং সন্তানের পড়াশুনার নিশ্চয়তা পেয়ে বেজায় খুশি বিনতী ত্রিপুরা। জেলা প্রশাসকের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাতেও ভুল করেননি এই বিধবা নারী।
বিনতী ত্রিপুরার ঘর পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসকের সফরসঙ্গী ছিলেন খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা মতিন, ভাইবোনছড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পরিমল ত্রিপুরা এবং সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য করুনাময়ী চাকমা।
এর আগে ওই এলাকার আরও ৫০টি দুঃস্থ পরিবারের মাঝে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করেছেন জেলা প্রশাসক। পাশাপাশি স্থানীয় যুবকদের নিয়ে নবগঠিত ‘সাল কাতাল’ পাঠাগারের আসবাবপত্র ক্রয়ের জন্য নগদ ১০ হাজার টাকা প্রদান করেন তিনি। এছাড়া ওই পাঠাগারের জন্য বই দেয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা মতিন।
শুধু যে বিনতী ত্রিপুরারই পাশে দাঁড়িয়েছেন এমনটা নয়, এর আগেও গেলো মে মাসে খাগড়াছড়ি সদরের ভূয়াছড়ি এলাকার বিধবা বয়স্কা নারী খাদিজা বেগমের দুখের গল্প শুনে তড়িৎ ব্যবস্থা নিয়েছিলেন জেলা প্রশাসক জনাব, প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস। দিয়েছেন নগদ অর্থ সহায়তাসহ ভূমি ও সেমিপাঁকা ঘর। এমন নানা মানবিক কাজের দরুণ জেলাবাসীর হৃদয়ে নিজের জন্য আলাদা একটা ভালোবাসার জায়গা করে নিয়েছেন এই জেলা প্রশাসক।