বুধবার, ২৯শে নভেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, সকাল ৭:১৫

অস্ত্র আতঙ্ক ও মাদক পাচারকারীরা বেপরোয়া।

ডেইলি ক্রাইম বার্তা ডেস্ক : থেমে নেই অস্ত্র আতঙ্ক ও মাদক পাচার। সম্প্রতি চট্টগ্রামে অস্ত্র আতঙ্ক ও মাদক পাচারকারীরা এক প্রকার বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। করোনাকালেও প্রতিদিন কোনো না কোনো এলাকা থেকে উদ্ধার করা হচ্ছে নানা রকম দেশি-বিদেশি মাদক ও অস্ত্র।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত এপ্রিল, মে ও জুন মাসে র‌্যাব-৭ চট্টগ্রাম থেকে মোট ৫ লাখ ১৪ হাজার ৪ পিস ইয়াবা, ১৬০ দশমিক শূন্য তিন কেজি গাজা, ১২ শত ৪৩ বোতল ফেন্সিডিল, ৮০ বোতল বিদেশি মদ ও ৬ শত ১৭ লিটার চোলাই মদ উদ্ধার করেছেন। এছাড়া উদ্ধারকৃত এসব মাদকের সাথে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন ৬৭ জনকেও গ্রেফতার করেছেন র‌্যাব-৭।
এসব অস্ত্র উদ্ধারের সময় র‌্যাব-৭ এর হাতে গ্রেফতার হয়েছে ২২ জন। যাদের মধ্যে ৩ জন র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। র‌্যাব-৭ এর কাছ থেকে পাওয়া গত তিন মাসের পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়-এই সময়ের মধ্যে তারা চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গা থেকে ৬ জন চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার আসামি ও ৬ জন ধর্ষণ মামলার আসামিকেও গ্রেফতার করেছে।
চট্টগ্রামে অস্ত্র ও মাদক নির্মুলে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে প্রশাসনের র‌্যাব-পুলিশ ছাড়াও আরও বিভিন্ন বাহিনী। জেলার পাশাপাশি নগরীতেও তারা সমানতালে গুরুত্ব দিয়ে অভিযান পরিচালনা করছেন। প্রশাসন বলছে, করোনা প্রকোপের শুরুর দিকে চট্টগ্রামে মাদক অস্ত্রের ঝান্ডা খুব একটা চোখে না পড়লেও ধীরে ধীরে তা প্রকট হয়ে উঠে। বর্তমানে মাদক কারবারিরা তাদের কর্মে পুরোদমে নেমে পড়েছেন।
তবে তাদের রুখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও পুরোদমে তৎপর রয়েছেন। মাদক-অস্ত্র উদ্ধারসহ কারবারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে চট্টগ্রামে নেয়া হচ্ছে প্রয়োজনীয় সব রকম ব্যবস্থা।
র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নের গত এপ্রিল, মে ও জুন মাসের একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়-বাহিনীটি গত তিন মাসে চট্টগ্রাম নগর, চট্টগ্রাম জেলা, ফেনী, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি থেকে বিপুল পরিমাণ অবৈধ ইয়াবা, গাজা, ফেন্সিডিল, বিদেশি মদ ও চোলাই মদ উদ্ধার করেছে। প্রায় ১৩ রকমের দেশি-বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার করেছে। গ্রেফতার করেছে মাদক, চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা ও ধর্ষণ মামলার অসংখ্য আসামি।
এদিকে করোনা প্রকোপের মধ্যেই গত তিন মাসে চট্টগ্রাম নগরীর ডবলমুরিং ও কোতোয়ালিসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক-অস্ত্রসহ অসংখ্য ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে রয়েছেন ছিনতাইকারী থেকে শুরু করে ডাকাত, প্রতারক, হত্যা মামলার আসামি, প্রতারক ও মাদক ব্যবসায়ী।
মহামারি করোনাকালে কিভাবে মাদক ও অস্ত্র কারবারিদের মোকাবেলা করছেন এমন প্রশ্নে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম জোন) ফারুক-উল হক বলেন, করোনার শুরুর দিকে অপরাধীরা কিছুটা ঘরে বসে থাকলেও সময়ের পরিক্রমায় তারা ফের স্বাভাবিক সময়ের মতো সংক্রিয় হয়ে উঠেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে মাদক-অস্ত্র কারবারে নেমে পড়ছে। এক্ষেত্রে পুলিশ যে বসে আছে তা কিন্তু বলা যাবে না। করোনা সংক্রমণ ঠেকানোর পাশাপাশি পুলিশ অপরাধীদের রুখতেও কাজ করছেন। বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া হচ্ছে।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (বন্দর জোন) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য ইউনিটের মতো নগর গোয়েন্দা পুলিশও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আন্তরিকতার সাথে কাজ করছে। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্যরা চট্টগ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অপরাধীদের অপরাধকর্ম পর্যবেক্ষণ করছেন। সময়ে সময়ে নজরদারির মাধ্যমে চিহ্নিত অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত মাদক অস্ত্র জব্দ করা হচ্ছে। এছাড়া গোয়েন্দা পুলিশও সিএমপি কমিশনার মাহবুবুর রহমান স্যারের নির্দেশে নগরজুড়ে করোনা মোকাবেলায় কাজ করছে।
র‌্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মাশকুর রহমান বলেন, প্রায় প্রতিদিনই অধিভুক্ত এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে এবং চিহ্নিত সন্ত্রসী ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছেন র‌্যাব-৭। অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র যেমন উদ্ধার করা হচ্ছে ঠিক তেমনি উদ্ধার করা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ মাদক ।