ডেইলি ক্রাইম বার্তা ডেস্ক : শনিবার (৩১ অক্টোবর) রাতে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের আওতাপাড়া গ্রামে জাহিদের বাড়িতে এই স্ত্রীকে খুনের ঘটনা ঘটে। পরকীয়ায় আসক্ত স্বামী জাহিদ হাসান মানিব্যাগে প্রেমিকার ছবি রেখেছিলেন। এর প্রতিবাদ করেন স্ত্রী ঐশি খাতুন (২০)। এ ঘটনার সূত্র ধরে সৃষ্ট কলহে তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলেন স্বামী জাহিদ। পরে আত্মহত্যা বলে প্রচার করার চেষ্টাও করেন জাহিদ ও তার পরিবার।
এ ঘটনায় শনিবার রাতেই ঐশির মা তার জামাই জাহিদ ও তার পরিবারের কয়েক সদস্যের নামে থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
নিহত ঐশি ঈশ্বরদী উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের চর-আওতাপাড়া গ্রামের মাহাবুল আলমের মেয়ে। ঐশির ৮ মাস বয়সী একটি সন্তান রয়েছে।
নিহত ঐশির মা সাহানারা বেগম জানান, ২০১৯ সালের ২৫ জানুয়ারি ঐশির বিয়ে হয় জাহিদের সঙ্গে। জাহিদ পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ছলিমপুর ইউনিয়নের মানিকনগর গ্রামের ঘরামি মো. হারুনের ছেলে।
বিয়ের সময় প্রায় ৩ লাখ টাকা যৌতুক দেয়া হয়। কিন্তু জাহিদ ও তার পরিবারের আরও চাহিদা থাকায় তাদের দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হয়।
ঐশির মা জানান, মেয়ের সুখের কথা ভেবে কিছুদিন পর আরও এক লাখ ৭০ হাজার টাকা দিয়ে জামাই জাহিদকে মোটরসাইকেল কিনে দেয়া হয়।
এদিকে বিয়ের কিছুদিন পরই তাদের মেয়ে ঐশি তার পরিবারকে জানান, স্বামী পরকীয়ায় আসক্ত। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কলহ লেগেই থাকত।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) জাহিদের মানিব্যাগে তার প্রেমিকার ছবি পান ঐশি। এ নিয়ে ঐশি প্রতিবাদ করায় তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। ঘটনাটি ঐশি তার বাবার বাড়িতেও জানান।
ঐশির পরিবার বিষয়টি জানার পর তার ছোট ভাই অমিত শনিবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে বোনকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য যান। এ সময় জাহিদ তাকে গালাগাল করে বাড়ি থেকে বের করে দেন।
ঐশিকেও বাবার বাড়িতে যাওয়া আটকে দেন। পরে অমিত ঐশি না নিয়েই বাড়িতে ফিরে যান। কিন্তু তারপর থেকেই ঐশির উপর শুরু হয় নতুন করে নির্যাতন। স্ত্রীকে বেধড়ক পিটুনি দেন জাহিদ।
ঐশির মা সাহানারা বেগম আরও জানান, শনিবার (৩১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় জাহিদ তাদেরকে ফোন করে খবর দেন ঐশি গলায় ফাঁস দিয়েছে। তারা গিয়ে দেখেন বিছানায় মেয়ের নিথর দেহ। তারপরও তারা জীবিত থাকার আশা নিয়ে ঐশিকে উদ্ধার করে দ্রুত পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ঐশিকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঐশির মা ও তার পরিবারের অন্য সদস্যরা অভিযোগ করে জানান, এটা একটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তারা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চান বলে জানান।
ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ নাসীর উদ্দিন লিখিত অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে এটি হত্যা না আত্মহত্যা। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
ওসি আরও জানান, লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরপরই অভিযুক্তদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলছে। স্বামী জাহিদ ও তার পরিবারের লোকজন বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছেন।