ডেইলি ক্রাইম বার্তা ডেস্ক : দু’হাজার আঠারো সাল, পশ্চিমবঙ্গের এক শিক্ষিকা হাজির হয়েছিলেন তার নতুন চাকরির জায়গায়- ভুটানের তাদিং পাহাড়ের কোলে এক গ্রামের স্কুলে, প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব নিয়ে।
গ্রামের নাম টোটোপাড়া। আদিম, অতি ক্ষুদ্র উপজাতি টোটোদের বাসভূমি। গ্রামটার উত্তরে ভুটান সীমান্ত, দক্ষিণে একশৃঙ্গ গণ্ডারের জন্য বিখ্যাত জলদাপাড়া অভয়ারণ্য, অন্যদিকে তোর্ষা নদী।
জলদাপাড়া অভয়ারণ্যের মূল আকর্ষণ একশৃঙ্গ গণ্ডার যেমন এক বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি, তেমনই এই টোটোরাও। গোটা জনজাতির বেশিরভাগ মানুষই দুরারোগ্য থ্যালাসেমিয়া বহন করেন, তাই এদের গড় আয়ু ৩৫ থেকে ৪০ বছর। সংখ্যায় কমতে কমতে ১৯৫১ সালের আদমশুমারিতে দেখা গিয়েছিল মাত্র ৩২১ জন টোটো জীবিত আছেন। তাদের সংরক্ষণের জন্য বিশেষ কর্মসূচি নেয়ার পরে এখন সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে প্রায় দু’হাজার।
সেই সময়ে স্কুলের যিনি সম্পাদক ছিলেন, ভাগীরথ টোটো, তিনি নতুন প্রধান শিক্ষিকাকে হাতজোড় করে বলেছিলেন, এখানে এসে কেউই বেশিদিন থাকতে চান না, তাই ছেলেমেয়েদের পড়াশোনাও ঠিকমতো হয় না। আপনি যেন ছেড়ে চলে যাবেনা না।
সেই থেকে ওই প্রধান শিক্ষিকা সেই গ্রামের স্কুলেই রয়ে গেছেন, আবার সেখান থেকেই সরাসরি পৌঁছে গেছেন দিল্লিতে ভারতের রাষ্ট্রপতির সামনে।
শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) ওই প্রধান শিক্ষিকা, মিশা ঘোষালকে ভারতের রাষ্ট্রপতি সম্মানিত করেছেন জাতীয় শিক্ষক হিসাবে। প্রতিবছর ৫ই সেপ্টেম্বর ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি ও দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি, জনপ্রিয় শিক্ষক সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কোন শিক্ষককে জাতীয় শিক্ষকের সম্মান দেয়া হয়।
এবছর পশ্চিমবঙ্গ থেকে দু’জনসহ যে ৪৭ জন ওই সম্মান পেয়েছেন, তাদেরই একজন মিসেস ঘোষাল- প্রত্যন্ত গ্রাম টোটোপাড়ার ধনপতি টোটো মেমোরিয়াল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। করোনা মহামারির জেরে এবছর জাতীয় শিক্ষক সম্মাননা ভার্চুয়াল পরিবেশে দেয়া হয়েছে। ওই সম্মান নিয়ে বাড়ি ফিরে শনিবার রাতে মিসেস ঘোষাল বলছিলেন, ওই যে সেক্রেটারি মশায় হাতজোড় করে বলেছিলেন, যে ছেড়ে চলে যাবেন না যেন, তারপর এখানেই থেকে গেলাম। গত ১২ বছর পরিবার থেকে দূরে থেকে অসম্ভব কষ্ট করে যাতায়াত করে যতদূর সম্ভব চেষ্টা করেছি টোটো ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনাটা ভাল লাগাতে। নানা রকমভাবে শিক্ষা দেয়ার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছি।
বিবিসি বাংলাকে মিশা ঘোষাল বলছিলেন, হয়তো তারই স্বীকৃতি পেলাম আজ। ভার্চুয়ালি হলেও মহামান্য রাষ্ট্রপতি আমাকে নমস্কার করছেন, আমি প্রতি-নমস্কার করছি – কী যে অনুভূতি বলে বোঝাতে পারব না।
তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা।