শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, বিকাল ৩:২৯

খুনি ধরা পড়ল ছিনতাইকারীদের ধরতে গিয়ে।

ডেইলি ক্রাইম বার্তা ডেস্ক : জুস খাইয়ে চালককে অজ্ঞান করে নিয়ে যায় ইজিবাইক। চালককে অজ্ঞান করে ইজিবাইক নিয়ে যাওয়ার এমন একটি ঘটনা তদন্তে নামে পুলিশ।
ছিনতাইকারীদের ধরতে গিয়ে ধরা পড়ে আড়াই মাস আগে একই কায়দায় ইজিবাইক ছিনতাই ও চালক হত্যায় জড়িত চক্র। মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে ময়মনসিংহ গোয়েন্দা পুলিশ চক্রটির দুই নারী ও দুই পুরুষ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর শুক্রবার বিকেলে আদালতে সোপর্দ করে। জেলায় গত ছয় মাসে ৯টি ঘটনায় পাঁচজন চালককে হত্যা করে ইজিবাইক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানায়, গত ২৬ জুন জেলার নান্দাইল উপজেলা থেকে সাইদুল ইসলামের ইজিবাইক ভাড়া করে চক্রটি। রিজার্ভ নিয়ে গন্তব্যে যাওয়ার পথে চালককে চেতনানাশক খাইয়ে রাস্তার পাশে ফেলে ইজিবাইক নিয়ে চলে যায়। ঘটনাটি জানার পর গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা তদন্তে নামেন। বিষয়টি নিয়ে ইজিবাইক চালক বৃহস্পতিবার থানায় একটি মামলাও করেন। চালককে অচেতন করে ইজিবাইকের সঙ্গে চক্রটি নিয়ে যায় চালকের মোবাইল ফোনও। সেই মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে গোয়েন্দা পুলিশ গাজীপুর হোতাপাড়া থানার মনিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় চক্রটির চার সদস্যকে।
তারা হলো- কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীর পাথরডুবি গ্রামের খোরশেদ আলম, নেত্রকোনার কলমাকান্দার হাটশিরা শিবনগর গ্রামের বকুল মিয়া, নান্দাইলের কাদিরপুর গ্রামের শেফালী বেগম ও কলমাকান্দার শিবনগর গ্রামের ইয়াসমিন আক্তার। তারা গাজীপুরের হোতাপাড়া এলাকায় অবস্থান করে চালাত অপতৎপরতা। চক্রটিকে ধরার পর নেত্রকোনার দুর্গাপুর এলাকা থেকে ছিনতাই করা দুটি ইজিবাইক উদ্ধার করে পুলিশ।
চক্রটিকে ধরার পর বেরিয়ে আসে গত ১২ এপ্রিল জেলার গৌরীপুর উপজেলায় ইজিবাইকচালক হত্যাকাণ্ডের রহস্য। পুলিশ ও পরিবার জানায়, গৌরীপুরের ডৌহাখলা ইউনিয়নের নন্দীগ্রামের ইজিবাইক চালক শাহীনুর ইসলাম খান প্রতিদিনের মতো সকালে ইজিবাইক নিয়ে বের হয়। রাতে না ফেরায় পরদিন স্ত্রী পারভীন আক্তার থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। ১৬ এপ্রিল ফেসবুকে পোস্ট থেকে স্বজনরা জানতে পারেন, এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির মৃতদেহ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ মর্গে আছে। পরে মেডিকেল মর্গে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন তারা।
এ ঘটনায় ১৯ এপ্রিল গৌরীপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়। হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ দেখতে পায় এক নারী ও এক যুবক শাহীনুরকে ভুয়া নাম-ঠিকানা দিয়ে ভর্তি করে চলে যায়। তবে চক্রটিকে ধরতে পারছিল না পুলিশ। মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে নান্দাইলের ছিনতাই ঘটনা উদ্ঘাটন করতে গিয়ে উন্মোচন হয় শাহীনুর হত্যারহস্য। হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজের সঙ্গে আটক ব্যক্তিদের যাচাই করলে শনাক্ত হয় তারা। ঘটনার স্ব্বীকারোক্তিও দেয়।
চক্রটি পুলিশকে জানায়, তারা প্রথমে বয়স্ক চালক দেখে ইজিবাইক নির্ধারণ করে। পরে নির্দিষ্ট স্থানের জন্য রিজার্ভ ভাড়া নেওয়া হয়। পথে তারা সবাই জুস জাতীয় খাবার খায়। চালককে নেশাজাতীয় দ্রব্যমিশ্রিত জুস খাওয়ায় নানা কৌশলে। এরপর চালককে রাস্তার পাশে ফেলে ইজিবাইক নিয়ে পালিয়ে যায়।
ময়মনসিংহ গোয়েন্দা পুলিশের ওসি জনাব, শাহ কামাল আকন্দ বলেন, গ্রেপ্তার চারজন একই এলাকায় অবস্থান করত। দুই ব্যক্তি ইজিবাইকও চালাত। নারীরাও অন্য কাজ করত। তবে অভাবের তাড়নায় তারা ইজিবাইক ছিনতাই শুরু করে। আদালতে তারা স্বীকারোক্তি দিয়েছে।
ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার জনাব, মোহা. আহমার উজ্জামান বলেন, চালকদের অজ্ঞান করে ইজিবাইক ছিনতাই করত চক্রটি। এ ধরনের অপতৎপরতা থেকে রক্ষা পেতে চালকদের যাত্রীর কাছ থেকে কোনো ধরনের খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে।