ডেইলি ক্রাইম বার্তা ডেস্ক : আজ সকালে ৪১তম এবং সর্বশেষ স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতু স্বপ্ন বাস্তবায়ন হলো এবং সেতু আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। এক সময়ের স্বপ্নের সেতু এখন দৃষ্টিসীমায় দিগন্তজুড়ে দাঁড়িয়ে। সবকিছু ঠিক থাকলে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছর ২০২১ সালের শেষের দিকে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে এই সেতু।
পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক সফিকুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সর্বশেষ স্প্যানটি স্থাপনের মাধ্যমে পদ্মার দুই পাড় মাওয়া ও জাজিরা যুক্ত হয়ে গেল। এরপর সড়ক ও রেলের স্ল্যাব বসানো সম্পন্ন হলে যানবাহন ও ট্রেন চলাচল করতে হবে।
এর আগে সেতুর শেষ স্প্যান গতকাল ঘড়ির কাটায় সন্ধ্যা ৫ টা ৫ মিনিট বাজতেই ‘২এফ’ ইয়ার্ড থেকে ভাসামান ক্রেনবাহী জাহাজ ‘তিয়ান ই’ তুলে নিয়ে ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।
২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মূল সেতুর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান বসানো হয়। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুতে ৪২টি পিলারের ওপর বসানো হয়েছে ৪১টি স্প্যান।
পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান বাসানোর পর পরবর্তী ১০ মাস থেকে এক বছরের মধ্যে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হবে বলে ৭ ডিসেম্বর জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব, ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, এর পরপরই সবার জন্য পদ্মা সেতু খুলে দেওয়া হবে।
২০১২ সালে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংক অর্থায়নের সিদ্ধান্ত বাতিল করার পর সরে যায় আর্ন্তজাতিক আরও তিনটি সংস্থা- এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি এবং ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক।
এতে পদ্মার আকাশে দেখা দেয় কালো মেঘের ঘনঘটা। ওই সময়ে প্রকল্পটির ব্যয় ছিল প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। যা ওই বছরের মোট বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ৫০ শতাংশ। ফলে নাগালের বাইরে চলে যায় পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের স্বপ্ন। পরের ইতিহাস সবার জানা। সব বাধা উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের দুঃসাহসিক চ্যালেঞ্জ নেয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার।
এতেই কেটে যায় কালো মেঘ, দিগন্ত আলোকিত করে হেসে উঠে সূর্য। সেতু নির্মাণের কর্মযজ্ঞের মধ্যদিয়ে শুরু হয় স্বপ্নের বীজ বোনা। আর সেই স্বপ্ন আজ বাস্তবে রুপ নিল।
মূল সেতুর কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। আর নদীশাসনের কাজ পেয়েছে চীনের আরেক প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন।
২০০৭ সালে একনেকে পাস হওয়া পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় ছিল ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। ২০১১ সালে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে দ্বিতীয় দফা সংশোধনের পর ব্যয় দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি। এরপর প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন না করে ২০১৮ সালের জুনে আবারও ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।