বুধবার, ৯ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, বিকাল ৩:০৬

বিল পরিশোধ বিনিময়ে নবজাতককে নিয়ে গেল।

ডেইলি ক্রাইম বার্তা ডেস্ক : রাশিদা বেগমের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় দরিদ্র দিনমজুর স্বামী তাঁকে না জানিয়ে আরেকটি বিয়ে করেন। দুই মেয়ে নিয়ে অথৈ সাগরে পড়া রাশিদা বেগম ছিলেন দারুণ অসহায়। ফের সংসার পেতে তাঁদের কোনো খোঁজ নিচ্ছিলেন না তাঁর স্বামী। পেটে সন্তান নিয়েই দুই মুঠো ভাতের জন্য কাজ নেন পাশের একটি বেকারিতে। গর্ভের সন্তানটির যখন ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় হয়ে আসে তখন দুশ্চিন্তায় দিশেহারা রাশিদা। ওই সময় তাঁর অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই নবজাতকটি বিক্রির জন্য তাঁকে প্ররোচিত করে এক ব্যক্তি। আর তার কথামতো ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর হাসপাতাল থেকেই নবজাতককে নিয়ে গেছে নিঃসন্তান নারী। বিনিময়ে হাসপাতালের বিল মিটিয়েছেন ওই নারী। সন্তান জন্ম দিয়েও তাকে কাছে না পেয়ে রাশিদা বেগম এখন পাগল প্রায়। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার দারোগারচালা এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। নবজাতক বিক্রির খবর চাউর হলে পুলিশ ঘটনার তদন্ত করে সত্যতা পায়। রাশিদা বেগম (৩৬) ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার শিলাসি গ্রামের আলাল উদ্দিনের স্ত্রী। তিনি শ্রীপুর উপজেলার দারোগারচালা এলাকার আবদুল মতিনের বাড়িতে ভাড়া থেকে পাশের একটি বেকারিতে কাজ করেন। প্রতিবেশীরা জানায়, তাঁর দুই মেয়ে সোমা আক্তার (১৭) ও মারিয়া (৭)। সোমা দুই বছর আগে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পর অভাবের কারণে পড়ালেখাও বন্ধ। মারিয়া একটি মাদরাসায় পড়ালেখা করছে। রাশিদা জানান, মাত্র ছয় হাজার টাকা মাসিক বেতনে বেকারিতে চাকরি করেন তিনি। সন্তান প্রসবের পর প্রায় মাস খানেক চাকরি করতে পারবেন না। তাছাড়া প্রসবকালে অস্ত্রোপচার দরকার হলেও সামর্থ্য নেই তাঁর। এসব নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিশেহারা ছিলেন তিনি। ওই অবস্থায় তাঁর প্রতিবেশী ভাড়াটিয়া আলম গর্ভের সন্তানটিকে বিক্রি করে দেওয়ার জন্য প্ররোচিত করেন তাঁকে।
রাশিদা বেগম আরো জানান, আলমের বাড়ি পাশের গফরগাঁও উপজেলার শিবগঞ্জ গ্রামে। সেখানে তাঁর বোন নিঃসন্তান। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর পরই নবজাতককে দিয়ে দিলে হাসপাতালের বিলসহ তাঁর চিকিৎসা ও এক মাস সংসার খরচও বহন করবেন বলে প্রলোভন দেখিয়েছিল তাঁকে। গত বৃহস্পতিবার ভোরে তাঁর প্রসব ব্যথা উঠে। পরে তাঁর বড় মেয়ে তাঁকে মাওনা চৌরাস্তা শাপলা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে সকাল আটটার দিকে অস্ত্রোপচার ছাড়াই মেয়ে শিশুর জন্ম দেন তিনি। তিনি দাবি করেন, ওই সময় তিনি ছিলেন সংজ্ঞাহীন। দুপুর দেড়টার দিকে তাঁর সংজ্ঞা ফেরার পর এক মুহূর্তমাত্র নবজাতকটিকে দেখতে দেওয়া হয় তাঁকে। এরপরই নবজাতককে নিয়ে যায় ওই নারী (আলমের বোন)।
রাশিদা জানান, নবজাতকের বিনিময়ে আলম হাসপাতালে সাত হাজার টাকা বিল পরিশোধ করেছেন। তিনি বাড়ি ফেরার পর গতকালই একটি সাদা স্ট্যাম্পে আলম তাঁর সই নিয়েছেন। এরপর তার (আলম) আর খোঁজই পাওয়া যাচ্ছে না। কান্নায় ভেঙে পড়ে রাশিদা বেগম বলেন, বাচ্চাডার লাইগ্যা অন্তরটা ফাইট্যা যাইতাছে। নবজাতক ফেরত চান কিনা এ প্রশ্নের জবাবে রাশিদা বলেন, অহন কি তারা ফেরত দিব। ফেরত দিলেই বাচ্চা লইয়া ক্যামনে কাম কইরা খায়াম। এদিকে স্থানীয় সাংবাদিক জামাল উদ্দিন জানান, নবজাতক বিক্রিতে স্থানীয় এক প্রভাবশালী জড়িত। প্রভাবশালী ব্যক্তির হুমকির কারণেই বুক ফাটলেও মুখ ফুটে অনেক কথা বলতে পারছেন না রাশিদা। নবজাতক বিক্রির খবর ছড়িয়ে পড়লে শুক্রবার দুপুরে ঘটনাতদন্তের জন্য ওই এলাকায় যান শ্রীপুর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এস আই) দেলোয়ার হোসেন। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। নবজাতককে উদ্ধার করে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত নবজাতককে উদ্ধার করা যায়নি। সূত্র : কালের কণ্ঠ।